প্রতারক চক্রের নিখুঁত কারসাজিতে প্রবাসীরা প্রতারিত

সোনার হরিণ ধরতে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশিরা।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অভিবাসন প্রক্রিয়া বা নিয়মের তোয়াক্কা না করে যারা প্রবাসে পাড়ি দিচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগ নানা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রতারক চক্রের নিখুঁত কারসাজিতে প্রতারিত হচ্ছেন তারা।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

সম্প্রতি একাধিক কুয়েতপ্রবাসীর কাছ থেকে বেশ কয়েকটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভিসা পাওয়া বা নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুয়া ভিসা প্রদানকারীদের দ্বারাও প্রতারিত হচ্ছেন সহজসরল প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

সম্প্রতি কাতার, ওমান, বাহরাইন, সৌদিআরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কুয়েতে বিভিন্ন পেশার ভিসা পাওয়া যাচ্ছে বলে একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রচার চালাচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মাধ্যমে।

ওই চক্রটি ‘সহজ ও কম মূল্যে’ ভিসা পাওয়ার বিষয়টিও যোগ করেছে।

 কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

অনেক প্রবাসী ফেসবুক ও ইউটিউবে নতুন ভিসা সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেখে ‘হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমু’র মাধ্যমে যোগাযোগ করতে থাকেন ওইসব ভিসাদাতা চক্রের সঙ্গে।

সরাসরি সাক্ষাতবিহীন কথোপকথন চলতে থাকে উভয়ের। ভিসাদাতা চক্র তাদের কর্মকাণ্ড প্রবাসীদের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলার জন্য নিখুঁত কিছু কাজও করে দেখান।

কুয়েতপ্রবাসী সুজন সাজ্জাল। কুয়েতের জাবরিয়া এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় কাজ করেন এ প্রবাসী। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘কুয়েতপ্রবাসী বাংলাদেশি-Kuwait to bangladesh’ ফেসবুক গ্রুপে বিজ্ঞপ্তি দেন জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি।

ওই গ্রুপে পোস্ট করা বিজ্ঞপ্তিতে নতুন ভিসা পাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। আর তখন থেকে তিনি ‘হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমু’র মাধ্যমে জনৈক জাহাঙ্গীরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকেন।

নতুন ভিসা পেতে প্রক্রিয়া শুরু করার কথা বলে সাজ্জালের কাছ থেকে পাসপোর্টের ফটোকপি চেয়ে নেন জাহাঙ্গীর। সাজ্জাল যাকে কুয়েতে নিয়ে আসতে চান ওই ব্যক্তির পাসপোর্টের কপি পাঠিয়ে দেন জাহাঙ্গীরের হোয়াটসঅ্যাপে।

কিছুদিন অপেক্ষার পর জাহাঙ্গীর নতুন একটি ভিসার ছবি পাঠিয়ে সাজ্জালের কাছে এক হাজার কুয়েতি দিনার দাবি করেন।

জাহাঙ্গীরের কথা অনুযায়ী সাজ্জাল একটি মোবাইল ব্যাংকিং নম্বরে এক হাজার কুয়েতি দিনার সমপরিমাণ বাংলাদেশি টাকা পাঠান।

সাজ্জাল জানান, তিনি কুয়েতের স্থানীয় ভিসা প্রসেসিং বিভাগে ভিসাটি ভুয়া নাকি সঠিক- সেটি যাচাই করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাকে কেউ সহযোগিতা করবে এমন লোক পাননি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন প্রবাসী বাংলাদেশি জানান, জনৈক জাহাঙ্গীর ভিসা দেওয়ার কথা বলে তার কাছ থেকে তিন লাখ বাংলাদেশি টাকা নিয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরও ভিসা দিচ্ছে না জাহাঙ্গীর।

ওই প্রবাসী বলেন, দুদিন আগে জাহাঙ্গীর তাকে ফোন দিয়ে জানায়, ভিসা বাবদ দেওয়া টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। যদিও একথা বিশ্বাস করতে নারাজ ওই প্রবাসী।

প্রতারণার শিকার এই দুই প্রবাসী জাহাঙ্গীরকে কখনো সরাসরি দেখেননি। এমনকি কথাও বলেননি। ভিসা সংক্রান্ত ব্যাপারে শুধুমাত্র ‘হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমু’র মাধ্যমেই তাদের কথোপকথন হতো।

এদিকে, কুয়েতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশিকুজ্জামানের সঙ্গে এ প্রতিবেদক কথা বলেন। তখন ভিসা প্রতারণা বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের কাছে জানতে চাওয়া হয়।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন আকারে প্রচারের মাধ্যমে অনেকে বলেছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য। তারা ভিসা দেবে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়।’

‘আমি কুয়েতপ্রবাসীদের অনুরোধ করবো, আপনারা এরকম প্রচারণা-প্ররোচনায় পড়ে প্রতারিত হবেন না।’

রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ‘যদি কেউ কখনো ভিসা পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে, তাহলে আপনারা দূতাবাসে এসে যোগাযোগ করুন। তবেই আমরা তার সত্যতা যাচাই করে পরামর্শ দিতে পারবো। ফেসবুকে ভিসা দেওয়ার বিজ্ঞাপন দেখে কেউ অর্থ লেনদেন করবেন না।’

কুয়েত ও বাংলাদেশ যৌথ নাম ব্যবহার করে কুয়েত থেকে পরিচালিত অনেক ফেসবুক পেজ ও গ্রুপে বিভিন্ন পোস্ট-বিজ্ঞাপন দেখে সহজসরল প্রবাসীরা প্রভাবিত হচ্ছেন।

তাই অনেকেই বলছেন, প্রযুক্তির বদৌলতে প্রতারণার ধরন পাল্টে গেছে। এখানে বুদ্ধিমান প্রতারক চক্র, প্রতারিত সহজসরল প্রবাসীরা।

আরো পড়ুন

RisingBD

Loading...
,