মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের আড়ালে হুন্ডি ব্যবসা

বিদেশে নানা পন্থায় অর্থপাচার হচ্ছে। এরইমধ্যে কিছু মাধ্যম শনাক্তও করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে অর্থপাচারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে হুন্ডি।

আর মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্ট ব্যবসার আড়ালে এই হুন্ডি ব্যবসায় নেমেছেন অনেকেই। তারা বিদেশে পাচার করছেন কোটি কোটি টাকা।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

সম্প্রতি অর্থপাচার চক্রের কয়েকজন সিআইডির হাতে ধরা পড়ার পর এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সিআইডি সূত্র বলছে, প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ যখন রেমিট্যান্স আকারে দেশে আসে, তখন বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও সুদৃঢ় হয়।

কিন্তু বিদেশে অবস্থানরত হুন্ডি ব্যবসায়ীরা প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেশে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছে রেখে দেয়। পরে দেশে অবস্থানরত তাদের সহযোগীরা প্রবাসীদের স্বজনদের কাছে সেই অর্থ পৌঁছে দেয়।

আর এভাবে বিদেশে অর্থপাচার করছে হুন্ডি ব্যবসায়ীরা।

 কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

অনুসন্ধান ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সিআইডি জানতে পারে, নোয়াখালী জেলার চাটখিল থানার ‘আদর্শ টেলিকম’, ‘বাবর টেলিকম’, ‘নিউ শাড়ি গ্যালারি অ্যান্ড কসমেটিক্স’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টরা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচারের সঙ্গে জড়িত।

তাদের লেনদেন বিবরণী বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এসব প্রতিষ্ঠান বিগত ৩ বছরে একটি মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই ৫০ কোটি টাকারও বেশি বিদেশে পাচার করেছে।

বুধবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে নোয়াখালীর জেলার চাটখিলের দক্ষিণ রেজ্জাকপুর থেকে অবৈধ হুন্ডি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এমএফএস-এর দুই এজেন্টকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা হলেন, শাহাদাৎ হোসেন (২৩) ও বলাই চন্দ্র দাস (২৬)।

এ প্রসঙ্গে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, শাহাদাৎ হোসেনের আপন চাচা মনোয়ার কাতার প্রবাসী।

এছাড়াও সৌদি প্রবাসী মিজান, হংকং প্রবাসী মমিনসহ বেশ কিছু প্রবাসী বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করেন। সেই টাকা বাংলাদেশে না পাঠিয়ে নিজেদের কাছে জমা রাখেন এবং হোয়াটসঅ্যাপ ও ইমোর মাধ্যমে শাহাদাৎকে প্রবাসীদের স্বজনদের টাকা পাঠানোর জন্য বলতেন।

আবার যাদের বিদেশে টাকা পাঠানো দরকার, তারা এসব এজেন্টকে ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দেন। সেই টাকা ব্যাংক থেকে তুলে এনে তারা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রবাসীদের স্বজনদের পাঠিয়ে দিতেন।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গ্রেফতারকালে তাদের কাছ থেকে অর্থ পাচারের কাজে ব্যবহৃত এজেন্ট সিম, একটি ল্যাপটপ, সাতটি মোবাইল ফোন, পেন ড্রাইভ, চেক বই, ব্যাংকের এটিএম কার্ডসহ নগদ ১৯ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

তাদের বিরুদ্ধে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পল্টন থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা হয়েছে।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম (সাইবার ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড অপারেশন) বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, চক্রটির কিছু লোক দেশের বাইরে আর কিছু দেশের কাজ করছে।

বিদেশে যারা থাকে তারা প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। আর দেশে যারা রয়েছে তারা এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা স্বজনদের কাছে পাঠাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘প্রবাসীরা যারা আছেন তারা তো দেশে টাকা পাঠান। কিন্তু যে টাকাটা পাঠাচ্ছেন, সেটা বিদেশেই থেকেই যাচ্ছে, হুন্ডি হয়ে যাচ্ছে।’

কয়েকটি এমএফএস প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। কারা দেশের ভেতরে জড়িত, তাদের একাউন্টে কারা টাকা দিয়েছে; এসব তথ্য আমরা যাচাই-বাছাই করছি।’

‘সেই সঙ্গে বিদেশ থেকে যারা নির্দেশনা দিচ্ছেন, তাদেরও নামের তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। তাদের বিষয়েও তদন্ত করছি।’

তাদের গ্রেফতারের পর এ চক্রের আরও কিছু ব্যক্তির সন্ধান সিআইডির হাতে এসেছে। অভিযানের স্বার্থে তা প্রকাশ করা হচ্ছে না বলেও জানান মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘অর্থপাচারের সঙ্গে জড়িত এসব চক্রের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান।’

আরো পড়ুন

BanglaTribune

Loading...
,