১৪ বছরে দেশে এসেছে ৪৫ হাজার প্রবাসীর মরদেহ

পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরবে এমন আশায় খুলনার নাজমুল বিশ্বাস (২৮) গিয়েছিলেন কাতারে। একই স্বপ্নে কুমিল্লার গোলাম মোস্তফা (২৬) সৌদি আরব ও নারায়ণগঞ্জের রবিউল আওয়াল (৩১) গিয়েছিলেন দুবাই।

কিন্তু গতবছরের ডিসেম্বরে ৩ জনই দেশে ফিরেছেন লাশ হয়ে। একজনের মৃত্যু দুর্ঘটনায়, বাকি দুজনের মৃত্যু স্ট্রোক ও হৃদরোগে।

শুধু এই ৩ জনই নন, ২০০৮ থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত দেশের ৩ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪৫ হাজার ৩০১ জন প্রবাসীর মরদেহ এসেছে।

এর মধ্যে ২৭ হাজার ২৩১ জনের (৬৩ শতাংশ) মরদেহ এসেছে মধ্যপ্রাচ্যের ৬টি দেশ থেকে। এরমধ্যে শুধু সৌদি আরব থেকেই এসেছে ১২ হাজার ৯৩০ জন প্রবাসীর মরদেহ।

Join us on WhatsApp for latest updates.

এছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ৫ হাজার ১২৩ জন, ওমান থেকে ৩ হাজার ৭৭৬ জন, কুয়েত থেকে ২ হাজার ৭২৪ জন, বাহরাইন থেকে ১ হাজার ১১ জন এবং কাতার থেকে ১ হাজার ৫৬২ জনের মরদেহ এসেছে।

বিদেশে মারা যাওয়া অনেক প্রবাসীর মরদেহ অনেক সময়ই দেশে আনা হয় না। স্থানীয়ভাবেই সেগুলো দাফন করা হয় বিশেষ করে সৌদি আরবে।

বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক দেশ হিসেবে কাতারে প্রবাসী শ্রমিকদের মৃত্যু নিয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও মধ্যপ্রাচ্যের বাকি দেশগুলোতে বিপুল পরিমাণ প্রবাসীর মৃত্যুর বিষয়টি আড়ালেই থেকে গেছে।

প্রতিবছর যত প্রবাসীর মরদেহ দেশে আসে তার ৬২ শতাংশই মধ্যপ্রাচ্য থেকে। অবশ্য ১ কোটি বাংলাদেশি প্রবাসীর একটি বড় অংশই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে যেখানকার আবহাওয়া বাংলাদেশিদের জন্য বেশ প্রতিকূল।

ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টি মরদেহ আসে। মৃতদের সঙ্গে আসা নথিপত্র অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি প্রবাসী মারা যান মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত (ব্রেইন স্ট্রোক) কারণে।

এদের একটা বড় অংশই মধ্যবসয়ী কিংবা তরুণ। এ ছাড়াও হৃদরোগসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা কিংবা প্রতিপক্ষের হাতেও খুন হন বাংলাদেশিরা।

Please LIKE our New Facebook Page for latest updates.

তবে তরুণ কিংবা মধ্যবয়সে কেন এতো বিপুল সংখ্যক প্রবাসী স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন সে বিষয়ে রাষ্ট্রীয় কোনো অনুসন্ধান হয়নি। প্রবাসী বাংলাদেশি, মৃতদের স্বজন ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্য মূলত মরু আবহাওয়ার দেশ।

প্রচণ্ড গরমে প্রতিকূল পরিবেশে অদক্ষ এই বাংলাদেশিরা ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কাজে যুক্ত থাকেন।

একদিকে প্রতিকূল পরিবেশ, আরেকদিকে অমানুষিক পরিশ্রম, ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকা, দীর্ঘদিন স্বজনদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা এবং সব মিলিয়ে মানসিক চাপের কারণেই সাধারণত স্ট্রোক বা হৃদরাগের মতো ঘটনা ঘটে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক ফখরুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঢাকায় প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ১০টা লাশ আসে। অধিকাংশ লাশই আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে। নথি অনুযায়ী, অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ ব্রেইন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক।’

‘নিহত এসব পরিবারকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নাস কল্যাণ বোর্ড থেকে দাফনের জন্য ৩৫ হাজার টাকা ও পরে নিহতদের পরিবাগুলোকে ৩ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন কফিনে আসা মরদেহগুলো বিমানবন্দরের কার্গো গেটে পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। অপেক্ষারত পরিবারগুলোর বসার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই, নেই কোনো টয়লেট।

রোদে বৃষ্টিতে তাঁরা দাঁড়িয়ে থাকেন, এই দপ্তর থেকে সেই দপ্তরে ছোটাছুটি করেন। অবশেষে যখন লাশ বুঝে পান, অধিকাংশ সময় মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেন না স্বজনেরা। ফলে স্বজনদের আহাজারির শেষ নেই।

আরো পড়ুন

Loading...
,