বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিটের দাম বাড়ার শঙ্কা

বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর বিপুল টাকা আটকে থাকায় সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশ থেকে টিকিটের দাম আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করছেন এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তাঁরা বলছেন, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়েছে। ফলে ভবিষ্যতে বিদেশ যাত্রার ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় পড়তে পারেন বাংলাদেশি যাত্রীরা।

কাতারে বিভিন্ন কোম্পানিতে নতুন চাকরির খবর

গত সপ্তাহে এক বিজ্ঞপ্তিতে বৈশ্বিক এয়ারলাইনসগুলোর আন্তর্জাতিক জোট ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) জানায়, বাংলাদেশে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর প্রায় ৩২৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আটকে আছে। অবিলম্বে এ অর্থ পরিশোধের তাগাদাও দিয়েছে সংস্থাটি।

সংস্থাটির প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সহ-সভাপতি ফিলিপ গোহকে উদ্ধৃত করে এতে বলা হয়, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারে কৌশলী হওয়া দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি সরকারের জন্য একটা কঠিন চ্যালেঞ্জও বটে। তবে সময়মতো এবং কার্যকর পদ্ধতিতে দেনা পরিশোধকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

বিমান সংযোগ হ্রাস ঠেকানো, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানির সম্ভাবনাকে ঠিক রাখার জন্যই এটি জরুরি।’

কাতারের সব আপডেট পেতে যুক্ত হোন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে

অবশ্য বাংলাদেশে বিদেশি এয়ারলাইনসের টাকা আটকে থাকার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে গত বছরের জুনেও একবার পাওনা আদায়ের তাগিদ দিয়েছিল আইএটিএ। সে সময় সংস্থাটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর প্রায় ২১৪ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার আটকা পড়েছে।

দেশের ট্রাভেল এজেন্টদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) বলছে, এর ফলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো এ দেশে তাদের ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। হংকংভিত্তিক এয়ারলাইনস ক্যাথে প্যাসিফিক আগে ঢাকা থেকে সপ্তাহে ৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করত।

কিন্তু এখন তারা ২টি ফ্লাইট কমিয়ে পরিচালনা করছে ৩টি করে ফ্লাইট। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক দুই এয়ারলাইনস ওমান এয়ারলাইনস ও জাজিরা এয়ারলাইনস চট্টগ্রাম থেকে তাদের কার্যক্রম গুটিয়ে নিয়েছে।

আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ বলেন, ‘এয়ারলাইনসগুলো ব্যবসা করতে এসেছে এই দেশে। তারা টিকিট বিক্রি করল, টাকা সংগ্রহ করল, কিন্তু দেশে নিতে পারল না—এই ব্যবসা কি কেউ করবে? এটার এফেক্ট হচ্ছে বিভিন্ন এয়ারলাইনস তাদের ফ্লাইট কমিয়ে দিচ্ছে। এতে টিকিটের দাম বেড়ে যাবে।’

আবদুস সালাম আরেফ বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে এমনিতেই টিকিটের দাম বেশি; আর বিদেশ বা পাশ্ববর্তী দেশ থেকে কম। এর বড় কারণ হলো, এই যে এখানে টাকা আটকে থাকে। কস্ট অব ফান্ড বেড়ে যায়। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে তাদের কস্ট অব ফান্ড অ্যাডজাস্ট করছে। এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে।

অন্যদিকে, কম দামের যে টিকিটগুলো আছে, সেগুলো তারা বাংলাদেশে বন্ধ করে দিচ্ছে। বিদেশ থেকে টিকিট ইস্যু হচ্ছে। এতে বাংলাদেশ থেকেই টাকা বিদেশে যাচ্ছে, কিন্তু অবৈধভাবে; হুন্ডির মাধ্যমে।’

বর্তমানে ৩০টি বিদেশি এয়ারলাইনস শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রতিদিন প্রায় দেড় শ ফ্লাইট পরিচালনা করছে। আরও কয়েকটি বিদেশি এয়ারলাইনস ঢাকায় ফ্লাইট শুরু করতে আগ্রহী। এর মধ্যে আফ্রিকাভিত্তিক ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস দু–এক মাসের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা শুরুর কথা রয়েছে।

আর সম্প্রতি ফ্লাইট শুরু করেছে শ্রীলঙ্কার ফিটস এয়ার। পাইপলাইনে আছে রয়াল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইনস, কোরিয়ান এয়ার, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উইটস এয়ার, ইন্দোনেশিয়ার গারুদা এয়ার, ইরাকি এয়ারলাইনস, পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনস (পিআইএ), উজবেকিস্তান এয়ারওয়েজ এবং সৌদি আরবের রিয়াদ এয়ার।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে বিদেশি এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট শুরু করার বিষয়ে আগ্রহ হারাবে।

বিমান পরিচালনা পর্যদের সাবেক সদস্য ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহেদুল আলম বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এর ফলে বাংলাদেশ সম্পর্কে বহির্বিশ্বে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হবে। ইমেজ সংকট তৈরি হবে। বিদেশি এয়ারলাইনস, যারা ভবিষ্যতে বাংলাদেশে অপারেট করতে চায়, এতে তারা নিরুৎসাহিত হবে।’

এই এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘বিদেশি এয়ারলাইনস যারা এখানে অপারেট করছে, কিন্তু টাকা পাঠাতে পারছে না মাসের পর মাস, স্বাভাবিকভাবেই তারা ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ক্ষতি পোষাতে তারা নানা চেষ্টা করবে।

একটি হতে পারে টিকিটের দাম বেড়ে যেতে পারে। এটার এফেক্টও কিন্তু দেখা যাচ্ছে। এটা হলো এখানে পাশের দেশের তুলনায় টিকিটের দাম বেশি। কম দামের টিকিটগুলো এখান থেকে পাওয়া যায় না। এগুলো বিদেশে বিক্রি হয়। এতে তাদের টাকা পেতে সহজ হয়। এতে সাধারণ মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’

বর্তমানে দেশের এভিয়েশন বাজারের ৮০ ভাগের নিয়ন্ত্রণই বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর হাতে। ফলে বিদেশি এয়ারলাইনসের টিকিটের দাম বেড়ে গেলে তা সামগ্রিকভাবে পুরো বাজারেই প্রভাব ফেলতে পারে। এতে বেড়ে যেতে পারে আকাশপথে ভ্রমণের খরচ।

আরো পড়ুন

itv

Loading...
,