তৃতীয় দেশে ফ্লাইট চালাতে চায় আমিরাতের ৪ সংস্থা

বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) চারটি এয়ারলাইনস।

বাংলাদেশ-ইউএই এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট (এএসএ) কনসালটেশন বৈঠকে বিষয়টি তুলবে ইউএই কর্তৃপক্ষ। সম্মতি পেলে সংস্থাগুলো বাংলাদেশ থেকে অন্য দেশে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন করতে পারবে।

কাতারের সব খবর হোয়াটসঅ্যাপে পেতে চাইলে এখানে ক্লিক করুন

এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি সংস্থাগুলো এই অনুমতি পেলে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে এবং রাষ্ট্রীয় সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসসহ দেশীয় বেসরকারি উড়োজাহাজ সংস্থাগুলো যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে লোকসানে পড়বে।

তাই এ বিষয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।

তৃতীয় দেশে ফ্লাইট পরিচালনাকে এভিয়েশন খাতের পরিভাষায় ‘ফিফথ ফ্রিডম’ বলা হয়।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সূত্র বলেছে, ইউএইর দুবাইভিত্তিক এমিরেটস এয়ারলাইনস ও ফ্লাই দুবাই, আবুধাবিভিত্তিক ইতিহাদ এয়ারওয়েজ ও শারজাহভিত্তিক এয়ার অ্যারাবিয়া তৃতীয় দেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চায়। পাশাপাশি ফ্লাইটের সংখ্যাও বাড়াতে চায়।

 কাতারে চাকরি খুঁজছেন? এখানে ক্লিক করুন

দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট নবায়নের উদ্যোগের প্রাথমিক অংশ হিসেবে সোমবার ঢাকায় দুই দিনের পরামর্শ সভা শুরু হচ্ছে। এই সভাতেই ফিফথ ফ্রিডম ও উড়োজাহাজ ওঠানামার সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলবে ইউএই।

বৈঠকে যোগ দিতে গতকাল রোববার ঢাকায় এসেছে ইউএই সিভিল এভিয়েশনের ২২ সদস্যের প্রতিনিধিদল। এই দলে আছেন ইউএই জেনারেল সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (জিসিএএ), এভিয়েশন রেগুলেটরি বডি অব ইউএই এবং কার্যক্রম চালানো এয়ারলাইনসগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বৈঠকে বাংলাদেশের সব এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কর্মকর্তারা থাকবেন। বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।

বর্তমানে এমিরেটস, ইতিহাদ, ফ্লাই দুবাই ও এয়ার অ্যারাবিয়া বাংলাদেশে প্রতি সপ্তাহে ১৩৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

এ ছাড়া উইজ এয়ার আবুধাবি প্রতি সপ্তাহে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট থেকে ৭টি করে যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবং বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস ইউএইতে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, এমিরেটস এয়ারলাইনস বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় যেকোনো দেশে বাধাহীনভাবে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের অনুমতি চায়।

এ ছাড়া ঢাকা থেকে সপ্তাহে আরও ৭টি এবং সিলেট থেকে ৩টি যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চায়। ফ্লাই দুবাই ফিফথ ফ্রিডমের অনুমতি নিয়ে ঢাকা-ব্যাংকক, ঢাকা-কুনমিং, চট্টগ্রাম-ব্যাংকক এবং চট্টগ্রাম-কুনমিং পথে ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়।

এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে আরও ১৪টি, চট্টগ্রাম থেকে ১৪টি এবং সিলেট থেকে ১৪টি যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চায়।

ইতিহাদ এয়ারওয়েজ ঢাকা থেকে হংকং রুটে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী। একই সঙ্গে বর্তমান ফ্লাইটসংখ্যার পাশাপাশি ঢাকায় আরও ৭টি যাত্রীবাহী ও ২টি কার্গো ফ্লাইট চালাতে চায়।

এদিকে এয়ার অ্যারাবিয়া ঢাকা-করাচি রুটে যাত্রীবাহী ও ভারতে কার্গো ফ্লাইট চালাতে অনুমতি চায়।

প্রতি সপ্তাহে ঢাকা থেকে আরও ১৪টি, চট্টগ্রাম থেকে ৭টি এবং সিলেট থেকে ৭টি যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চায়। পরামর্শক বৈঠকে এসব প্রস্তাব দেওয়া হবে।

উড়োজাহাজ চলাচল খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউএইর এয়ারলাইনসগুলো ফিফথ ফ্রিডম ও বাড়তি ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি পেলে বিমান বাংলাদেশসহ দেশীয় এয়ারলাইনস অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে।

কারণ, ইউএইর এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশের বাজার দখল করতে কম ভাড়া ধার্য করলে তার সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে দেশি এয়ারলাইনসগুলো দেউলিয়ার মুখে পড়বে।

বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে বেবিচক, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, নভোএয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক করেছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

বৈঠকে স্থানীয় এয়ারলাইনসের সক্ষমতার ভিত্তিতে ইউএই-ভিত্তিক এয়ারলাইনসগুলোর জন্য ফ্লাইট বরাদ্দ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ টি এম নজরুল ইসলাম বলেন, ইউএইর এয়ারলাইনসগুলো ফিফথ ফ্রিডম এবং বেশি ফ্লাইট পেলে বাংলাদেশের এয়ারলাইনসগুলো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। কারণ, ওই সংস্থাগুলোর বিশ্বব্যপী নেটওয়ার্ক, ফ্রিকোয়েন্সি বেশি।

তিনি বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কার্গো উড়োজাহাজ কেনার পরিকল্পনা করছে। এ অবস্থায় বিদেশি এয়ারলাইনস কার্গো পরিবহনের ফিফথ ফ্রিডম পেলে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিমান বাংলাদেশ।

একইভাবে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে পড়বে বিমান। এ কারণে বেবিচকের উচিত অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নেওয়া।

ইউএইর সঙ্গে এএসএ পরামর্শ সভা প্রসঙ্গে বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্টের ক্ষেত্রে দুই দেশই চায় নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে।

ইউএইর পক্ষ থেকে যেমন কিছু প্রস্তাব থাকবে, তেমনি বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও প্রস্তাব থাকবে। এবারের বৈঠকে এসব প্রস্তাব নিয়েই আলোচনা হবে। এসব নিয়ে পরে আরও কাজ হবে। কোনো কিছুই এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

আরো পড়ুন

AjkerPatrika

Loading...
,